একটা সময় আমি নিজেই ভাবতাম, “আচ্ছা, এনআইডি কার্ডে যদি ভুল থাকে, তাহলে সেটা সংশোধন করতে কি একটা যন্ত্রণার ব্যাপার!” কিন্তু আসলে প্রক্রিয়াটা একদমই এমন নয় যদি ঠিকঠাকভাবে কাগজপত্র তৈরি থাকে।
এই লেখায় আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি কীভাবে নাম, জন্মতারিখ ও ঠিকানা সংশোধন করেছি, আর তার জন্য আমাকে কি কি কাগজপত্র দিতে হয়েছে।
চলো, একদম সহজ ভাষায় জানি এনআইডি সংশোধন করতে কি লাগে, কিভাবে করবো, কত ফি লাগবে, আর কোথায় যাবো।
✅ আমি কেন সংশোধন করেছিলাম?
আমার এনআইডি কার্ডে নাম ছিল ভুলভাবে লেখা, জন্মতারিখও এক বছরের গ্যাপ, আর ঠিকানা ছিল আগের পুরনো বাসার। চাকরির ইন্টারভিউতে গিয়ে প্রথমবার ধরা খেয়েছিলাম পাসপোর্টে একটা নাম, এনআইডিতে আরেকটা! তখনই বুঝলাম, আর দেরি করলে সমস্যা আরও বাড়বে।
🔁 ১. নাম সংশোধন করতে যা যা লাগে
নাম সংশোধন করার সময় আমাকে দিতে হয়েছিল:
- ✅ জন্ম সনদ সার্টিফিকেট (সরকারি রেজিস্ট্রার অফিসের ১৭ ডিজিটের)
- ✅ এসএসসি সনদ (এখানে আমার নাম সঠিক ছিল)
- ✅ পাসপোর্ট কপি (যেহেতু আমার পাসপোর্টে ঠিক নাম ছিল)
📝 টিপস: সব ডকুমেন্টে যেন নাম একইভাবে লেখা থাকে। আমি একবার “Md.” লিখে সমস্যায় পড়েছিলাম, অথচ অন্য কাগজে “Mohammad” ছিল।
📆 ২. জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য যা লাগে
আমার জন্মতারিখ সংশোধন ছিল একটু tricky, কারণ পুরাতন NID আর জন্ম নিবন্ধনের তারিখে পার্থক্য ছিল।
যা দিয়েছিলাম:
- ✅ নতুন ফরম্যাটের জন্ম নিবন্ধন (এখনকার অনলাইন কপি)
- ✅ এসএসসি সনদ (যেখানে DOB স্পষ্ট ছিল)
❗ কিছু ক্ষেত্রে (যেমন: বড় গ্যাপ থাকলে) নোটারি পাবলিকের হলফনামা লাগতে পারে। আমার ক্ষেত্রে দরকার হয়নি, কারণ দুইটা ডকুমেন্টই মিলে গিয়েছিল।
🏡 ৩. ঠিকানা সংশোধনের জন্য যা লাগে
আমার আগের ঠিকানায় আর থাকতাম না, তাই নতুন ঠিকানার প্রমাণ দেখাতে হয়:
- ✅ স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র (নতুন বাসার ঠিকানার জন্য)
- ✅ বিদ্যুৎ বিলের কপি (বাসার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ ছিল)
আমি ভাড়াটিয়া ছিলাম, তাই বাড়িওয়ালার একটা declaration ও দিয়ে দিয়েছিলাম এটা অতিরিক্ত হিসেবে নিয়েছিল।
💸 ফি ও সময়
প্রক্রিয়া | সময়সীমা | ফি |
---|---|---|
সাধারণ সংশোধন | ১৫-৩০ দিন | ২৩০ টাকা |
জরুরি (Express) | ৭-১০ দিন | ৩৪৫ টাকা |
আমি Express বেছে নিয়েছিলাম, কারণ তাড়াতাড়ি দরকার ছিল।
🧾 ধাপে ধাপে আবেদন করার প্রক্রিয়া
প্রথমবার করার সময় একটু ভয় লাগছিল, কিন্তু যখন একবার করে ফেললাম তখন মনে হলো, “এইটা তো একদমই doable!” 😄
✨ ধাপ ১: অনলাইনে আবেদন করো
👉 ওয়েবসাইট: https://services.nidw.gov.bd
👉 লগইন করে “Information Correction” অপশনে ক্লিক করো
✨ ধাপ ২: তথ্য সংশোধন করো ও ডকুমেন্ট আপলোড দাও
- যেটা সংশোধন করতে চাও সেটা সিলেক্ট করো (নাম, DOB, ঠিকানা)
- সঠিক তথ্য টাইপ করে প্রমাণপত্র আপলোড করো (স্ক্যান/ছবি)
✨ ধাপ ৩: ফি প্রদান
- মোবাইল পেমেন্ট (বিকাশ/নগদ/রকেট) দিয়ে অনলাইনেই দিতে পারো
✨ ধাপ ৪: অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাও
- বায়োমেট্রিক দেওয়ার জন্য অফিসে যাওয়ার সময় বুক করো
✨ ধাপ ৫: অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক দাও
- প্রিন্ট কপি আর সব কাগজ সঙ্গে নিয়ে যাও
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি দিয়ে প্রক্রিয়া শেষ করো
✨ ধাপ ৬: রিসিভ কপি রেখো
- আবেদন ট্র্যাক করার জন্য Reference নম্বর/রিসিভ কপি খুব দরকার
📌 কিছু বাস্তবিক টিপস (নিজের অভিজ্ঞতা থেকে)
- জন্ম নিবন্ধন ভুল থাকলে আগে সেটা সংশোধন করো।
- কাগজ আপলোড করার সময় ছবি স্পষ্ট ও সোজা রাখতে হবে।
- সবকিছুর স্ক্যান কপি Google Drive এ রেখে দাও, ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
- বায়োমেট্রিক দিতে গিয়ে লম্বা লাইন ধরতে হতে পারে সকালে যাও ভালো হয়।
- সময় ধরে রাখো সবকিছু একদিনে হবে না, ধৈর্য লাগবে।
🤔কেন সময় থাকতে সংশোধন করা দরকার?
আমার এনআইডির তথ্য ঠিক না থাকার কারণে:
- চাকরির কাগজপত্রে সমস্যা হয়েছিল
- ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে ঝামেলা হয়েছিল
- একবার পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন আটকে গিয়েছিল
যার ফলে সময় ও অর্থ দুইই গেছে।
তাই বলবো, এখনই দেখে নাও এনআইডির তথ্য ঠিক আছে কিনা, না থাকলে দেরি না করে আবেদন করে ফেলো।
🙋 কোন প্রশ্ন?
তুমি যদি চাও, আমি অনলাইনে আবেদন করার ধাপগুলো স্ক্রিনশটসহ গাইড করে দিতে পারি। অথবা প্রশ্ন থাকলে সরাসরি জিগ্গেস করো উত্তর পেতে সময় লাগবে না।
আমি একটি সরকারি চাকরি করি পাশাপাশি ব্লগিং করি। আমি চাকরি সুবাদে বিভিন্ন জানার চেষ্টা করি তারই পেক্ষিতে এই সাইট টা পরিচালনা করা। তাই এখানের দেওয়া সকল তথ্য বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে লিখি।