একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকা মানে আইনি জটিলতায় পড়া। তবে চিন্তার কিছু নেই – এই বিস্তারিত গাইডে আপনি জানবেন কিভাবে সঠিক নিয়মে জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে হয়।
কেন বাতিল করতে হবে আপনার একাধিক জন্ম নিবন্ধন?
বাংলাদেশে একজন ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র একটি জন্ম নিবন্ধন থাকতে পারে। একাধিক জন্ম সনদ থাকা দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এমনকি জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে।
বাতিলের প্রধান কারণসমূহ:
সরকারি নিয়মে পরিবর্তন: নতুন সুবিধা
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে নতুন নিয়ম চালু করেছে। এখন আপনি আপনার সুবিধামতো যেকোনো একটি জন্ম সনদ রেখে বাকিগুলো বাতিল করতে পারবেন।
পুরাতন vs নতুন নিয়ম:
পুরাতন নিয়ম | নতুন নিয়ম |
---|---|
প্রথম জন্ম সনদ রাখতে হত | যেকোনো একটি রাখতে পারবেন |
অন্যগুলো বাতিল করতে হত | সুবিধামতো নির্বাচন করুন |
NID/পাসপোর্টে সমস্যা হত | এখন আর সমস্যা নেই |
কোথায় আবেদন করবেন?
আপনার স্থানীয় নিবন্ধক কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ইউনিয়ন পরিষদ (গ্রামাঞ্চলের জন্য)
- পৌরসভা কার্যালয় (শহরাঞ্চলের জন্য)
- সিটি কর্পোরেশন (বড় শহরের জন্য)
গুরুত্বপূর্ণ: বর্তমানে অনলাইনে সাধারণ নাগরিকরা নিজেরা বাতিলের আবেদন করতে পারেন না। সরাসরি কার্যালয়ে যেতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে আপনার লাগবে:
আবশ্যকীয় ডকুমেন্ট:
- মূল জন্ম সনদ (যেটি বাতিল করতে চান)
- ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর
- সঠিক জন্ম তারিখ
- সকল জন্ম সনদের ফটোকপি (একাধিক থাকলে)
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (প্রয়োজনে)
বাতিলের কারণ সহ লিখিত বিবৃতি:
আপনাকে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে:
আবেদনের ধাপসমূহ
ধাপ ১: প্রস্তুতি
- সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয়ে যান
- বাতিল আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন
- সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিন
ধাপ ২: ফরম পূরণ
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো:
- নিবন্ধিত ব্যক্তির পূর্ণ নাম
- জন্ম তারিখ
- বাতিলের সুনির্দিষ্ট কারণ
- আবেদনকারীর সাথে সম্পর্ক
ধাপ ৩: যাচাই প্রক্রিয়া
ধাপ ৪: চূড়ান্ত অনুমোদন
- আবেদনটি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো হবে
- প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করা হবে
- অনুমোদন পেলে সনদটি বাতিল হবে
ফি এবং খরচ
পেমেন্ট পদ্ধতি: বিকাশ, নগদ, রকেট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারবেন।
প্রক্রিয়াকরণের সময়
সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে:
- কার্যালয়ের কাজের চাপের উপর
- তথ্য যাচাইয়ের জটিলতার উপর
- রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুমোদনের উপর
বিশেষ পরিস্থিতি
যদি জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০১ এর আগে হয়:
যদি জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০১ এর পরে হয়:
সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
সমস্যা: সার্ভার ডাউন
সমাধান: রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেছেন, সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। পরে আবার চেষ্টা করুন।
সমস্যা: কর্মকর্তারা সহযোগিতা করছেন না
সমাধান: নতুন নিয়ম সম্পর্কে অনেকে অবগত নন। ৫ জুলাই ২০২৩ এর সরকারি চিঠির কথা বলুন।
আইনি দিক
জন্ম নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে:
- ধারা ১৫: জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংশোধন ও বাতিলের নির্দেশনা
- ধারা ২১: নির্ধারিত ফি প্রদানের বিধান
- ফরম-৮: বাতিল আবেদনের জন্য নির্ধারিত ফরম
সতর্কতা
⚠️ মনে রাখবেন:
- জালিয়াতি করে সুবিধামতো জন্ম সনদ বাতিল করা যাবে না
- অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
- সরকার যেকোনো সময় একাধিক জন্ম সনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে
বিকল্প সেবা
যদি আপনার জন্ম সনদে ভুল তথ্য থাকে, বাতিল না করে সংশোধন করান। এজন্য:
- bdris.gov.bd এ যান
- সংশোধন আবেদন করুন
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিন
দরকারি যোগাযোগ
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়:
- ওয়েবসাইট: bdris.gov.bd
- জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন অধিদপ্তর
- হেল্পলাইন: স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন
সহায়ক টিপস:
- সকাল বেলা অফিসে যান, কম ভিড় থাকে
- সব কাগজপত্রের ফটোকপি সাথে রাখুন
- মূল কাগজপত্র যত্নে সংরক্ষণ করুন
- প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত রশিদ সংরক্ষণ করুন
শেষ কথা
জন্ম নিবন্ধন বাতিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। সঠিক নিয়ম মেনে চললে আপনি সহজেই আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পারবেন। মনে রাখবেন, একটি ব্যক্তির জন্য শুধুমাত্র একটি জন্ম সনদই যথেষ্ট।
আপনার যদি এখনও প্রশ্ন থাকে বা আরও সাহায্যের প্রয়োজন হয়, স্থানীয় নিবন্ধক কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। তারাই আপনাকে সবচেয়ে ভালো গাইড করতে পারবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং আইন মেনে চলুন।
আমি একটি সরকারি চাকরি করি পাশাপাশি ব্লগিং করি। আমি চাকরি সুবাদে বিভিন্ন জানার চেষ্টা করি তারই পেক্ষিতে এই সাইট টা পরিচালনা করা। তাই এখানের দেওয়া সকল তথ্য বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে লিখি।