নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৫

পাসপোর্ট তৈরি করতে কী কী কাগজপত্র লাগে, তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। বিশেষ করে বয়সভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে কিছু পার্থক্য দেখা যায়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ২০২৫ সালের জন্য নতুন পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী কী কী কাগজপত্র লাগবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এতে আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হবে।

ই-পাসপোর্ট আবেদনের সাধারণ নিয়ম

ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে পূরণ করতে হয়। কিছু সাধারণ নিয়ম আছে যা সবার জন্য প্রযোজ্য:

  • ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো কাগজপত্র সত্যায়ন করার দরকার নেই।
  • আবেদন ফর্মে কোনো ছবি সংযোজন বা সত্যায়নের প্রয়োজন নেই।
  • আবেদনের সময় কিছু তারকা চিহ্নিত ঘর থাকে, সেগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

বয়স অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

পাসপোর্ট আবেদনের জন্য বয়স অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হয়। নিচে বয়সভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলো:

  • ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স: এদের জন্য অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন) লাগবে। জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই ডিজিটাল হতে হবে।
  • ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে যাদের বয়স: এই বয়সের আবেদনকারীরা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন) অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
  • ২০ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স: এদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) থাকা আবশ্যিক। তবে যারা বিদেশে থাকেন, তারা ২০ বছরের বেশি বয়স হলেও অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগতে পারে:

  • অপ্রাপ্তবয়স্ক আবেদনকারী (১৮ বছরের কম) যাদের NID নেই: তাদের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) জমা দিতে হবে। আবেদন ফর্মে পিতা-মাতার তথ্য দিতে হয়।
  • দত্তক বা অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে: পাসপোর্টের আবেদনের সাথে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত আদেশ জমা দিতে হবে।
  • পেশাগত সনদ: যদি আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার বা অন্য কোনো পেশাজীবী হন, তাহলে আপনার পেশার প্রমাণপত্র (যেমন: ডাক্তার আইডি কার্ড, ইঞ্জিনিয়ারিং সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স) জমা দিতে হবে।
  • সরকারি আদেশ (GO) বা NOC: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি আদেশ (GO), অনাপত্তি সনদ (NOC), প্রত্যয়নপত্র, অবসরোত্তর ছুটির আদেশ (PRL অর্ডার), পেনশন বা পেনশন বই জমা দিতে হবে।
  • বিবাহ সনদ বা তালাকনামা: যদি আপনি বিবাহিত উল্লেখ করেন এবং স্বামী/স্ত্রীর তথ্য দিতে চান, তাহলে বিবাহ সনদ (নিকাহনামা) বা বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট ফি এবং অন্যান্য বিষয়

  • পাসপোর্ট ফি: দেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফি-এর উপর ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ প্রযোজ্য। বিদেশে আবেদনের ক্ষেত্রেও সরকার নির্ধারিত ফি দিতে হবে।
  • মেয়াদ ও পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তারা ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্ট পাবেন।
  • অতি জরুরি পাসপোর্ট: অতি জরুরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে, আপনাকে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। যদি সব তথ্য ঠিক থাকে, তাহলে ২ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। সাধারণ ডেলিভারির জন্য ১৫ দিন সময় লাগে।
  • মূল কাগজপত্র প্রদর্শন: আবেদনের সময় মূল জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (ইংরেজি ভার্সন) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সনদ, সরকারি আদেশ (GO) ইত্যাদি প্রদর্শন করতে হবে।
  • পাসপোর্ট রি-ইস্যু: যদি পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে চান, তাহলে মূল পুরাতন পাসপোর্ট প্রদর্শন করতে হবে।
  • হারানো পাসপোর্ট: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সময় পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি ও জিডির কপি জমা দিতে হবে।
  • শিশুদের ছবি: ৬ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে ৩আর সাইজের ল্যাব প্রিন্ট ছবি লাগবে, যার ব্যাকগ্রাউন্ড গ্রে হতে হবে।

আরও দেখুন: টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি কাগজ লাগে?

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • পাসপোর্ট আবেদন করার আগে epassport.gov.bd ওয়েবসাইটটি ভালোভাবে দেখে নিন।
  • সব কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
  • কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।

Leave a Comment

Scroll to Top