ভাবুন তো—আপনার বয়স ১৮ পার হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো জন্ম নিবন্ধন হয়নি! কিংবা আছে, কিন্তু ভুলভ্রান্তি আছে। জানেন কি, জন্ম নিবন্ধন ছাড়া বাংলাদেশে অনেক কিছুই আটকে যায়?
কেন দরকার: জন্ম নিবন্ধন শুধু একটা কাগজ নয়, এটা আপনার পরিচয়ের প্রমাণ। স্কুল-কলেজে ভর্তি, চাকরি, পাসপোর্ট, বিয়ে, মোবাইল সিম কেনা কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা—সব জায়গায় এটা লাগে।
বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
১৮ বছরের বেশি বয়সে জন্ম নিবন্ধন করতে লাগবে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (যদি থাকে), বাবা-মায়ের আইডি বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর, নাগরিকত্বের সনদ/প্রত্যয়নপত্র, ঠিকানার প্রমাণপত্র, ছবি। অনলাইনে আবেদন করে প্রিন্ট নেওয়ার পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন অফিসে কাগজপত্র জমা দিলেই হয়ে যাবে।
বড়দের জন্ম নিবন্ধন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- শিক্ষাগত সনদ: পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি বা সমমানের সার্টিফিকেট।
- বাবা-মায়ের তথ্য: জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন নম্বর।
- নাগরিকত্ব/প্রত্যয়নপত্র: স্থানীয় চেয়ারম্যান/কাউন্সিলরের দেওয়া নাগরিক সনদ।
- ঠিকানার প্রমাণ: বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল বা খাজনার রশিদ।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে): বিশেষ করে সংশোধনের সময় দরকার হতে পারে।
- বিয়ের কাগজপত্র (যদি বিবাহিত হন): কাবিননামার ফটোকপি।
- ছবি: পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি।
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন
- br.lgd.gov.bd ওয়েবসাইটে যান।
- “জন্ম নিবন্ধন আবেদন” এ ক্লিক করুন।
- নিজের তথ্য, বাবা-মায়ের তথ্য, ঠিকানা ইত্যাদি পূরণ করুন।
- ফর্ম পূরণ শেষে প্রিন্ট করুন এবং অ্যাপ্লিকেশন আইডি সংরক্ষণ করুন।
- প্রিন্ট করা ফর্ম + প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিন।
- যাচাই শেষে ফি পরিশোধ করুন।
- নির্ধারিত দিনে অফিস থেকে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করুন।
জন্ম নিবন্ধনে ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন করবেন?
- আবেদন: ওয়েবসাইটে গিয়ে “জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন” অপশনে আবেদন করতে হবে।
- প্রমাণপত্র:
- নামের ভুল → শিক্ষাগত সনদ / আইডি কার্ড
- জন্ম তারিখের ভুল → ডাক্তারি সনদ / শিক্ষাগত সনদ
- বাবা-মায়ের নামের ভুল → তাদের আইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন
তুলনামূলক টেবিল
বিষয় | প্রথমবার জন্ম নিবন্ধন | জন্ম নিবন্ধন সংশোধন |
---|---|---|
মূল কাজ | নতুন নিবন্ধন করা | আগের ভুল ঠিক করা |
কারণ | আগে জন্ম নিবন্ধন হয়নি | জন্ম নিবন্ধন আছে, কিন্তু ভুল আছে |
জটিলতা | তুলনামূলক সহজ | ভুলের ধরন অনুযায়ী জটিল |
কাগজপত্র | জন্ম প্রমাণপত্র | ভুল সংশোধনের প্রমাণপত্র |
সাধারণ কিছু প্রশ্ন
Q: জন্ম নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর: বয়স অনুযায়ী কিছু ফি দিতে হয় (সাধারণত ১০০–২০০ টাকা)। অফিসে জেনে নিন।
Q: সময় কত লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৭–১৫ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়।
Q: অনলাইনে আবেদন করলে কি আর অফিসে যেতে হবে না?
উত্তর: অফিসে অবশ্যই যেতে হবে। অনলাইন শুধু প্রাথমিক ধাপ।
Q: পাসপোর্ট বানাতে জন্ম নিবন্ধন দরকার?
উত্তর: হ্যাঁ, এখন বাধ্যতামূলক।
Q: বাবা-মা মারা গেলে কীভাবে জন্ম নিবন্ধন করব?
উত্তর: তাদের আগের তথ্য (আইডি/জন্ম নিবন্ধন) ব্যবহার করতে হবে। না থাকলে জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নপত্র লাগবে।
যে ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন
- ফরমে ভুল বা ভুয়া তথ্য দেওয়া।
- অসম্পূর্ণ কাগজপত্র জমা দেওয়া।
- সময়মতো কাগজপত্র না জমা দেওয়া।
- দালালের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করা।
শেষ কথা
১৮ বছরের বেশি বয়স হলেও জন্ম নিবন্ধন করতে দেরি হয় না। সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়ে ধাপে ধাপে আবেদন করলে সহজেই হাতে পাবেন আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ।
👉 এখনো যদি না করে থাকেন, আজই শুরু করুন।
রেফারেন্স
- জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ – [আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট]
- জন্ম নিবন্ধন তথ্য ব্যবস্থা – br.lgd.gov.bd
আমি একটি সরকারি চাকরি করি পাশাপাশি ব্লগিং করি। আমি চাকরি সুবাদে বিভিন্ন জানার চেষ্টা করি তারই পেক্ষিতে এই সাইট টা পরিচালনা করা। তাই এখানের দেওয়া সকল তথ্য বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে লিখি।