বিদেশ যাবেন? চাকরি পেয়েছেন? কিংবা অন্য কোনো দরকারি কাজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট লাগছে? চিন্তার কিছু নেই! এটা পাওয়া এখন অনেক সহজ। চলুন, একদম সহজ ভাষায় জেনে নিই, এই সার্টিফিকেট পেতে আপনার কী কী কাগজপত্র লাগবে আর কীভাবে ধাপে ধাপে আবেদন করবেন।
হঠাৎ করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কেন জরুরি হয়ে পড়লো?
আজকাল বিদেশে পড়াশোনা, চাকরি বা ইমিগ্রেশনের জন্য এই সার্টিফিকেটটা খুবই দরকারি। এটা প্রমাণ করে যে আপনার নামে কোনো খারাপ রেকর্ড বা মামলা নেই। এক কথায়, আপনি একজন ‘ক্লিয়ার’ মানুষ!
এক নজরে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে কী কী লাগবে
সহজ কথায়, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে মূলত আপনার পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন, এবং আপনার ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন বিদ্যুৎ বিল) দরকার হবে। এরপর অনলাইনে ছোট্ট একটা আবেদন আর ৫০০ টাকা ফি দিলেই কাজ শেষ!
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হয়?
এটা একদম সহজ! নিচের জিনিসগুলো হাতের কাছে রাখুন:
- আপনার পাসপোর্ট: আপনার যে পাসপোর্টটা আছে, সেটার প্রথম দিকের ৫ পাতা আর শেষের দিকের ৫ পাতা স্ক্যান করে রাখুন। যদি পুরনো কোনো পাসপোর্ট থাকে, সেটারও তথ্য লাগতে পারে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন: আপনার NID কার্ডের দুই পাশের ছবি বা স্ক্যান কপি। যদি NID না থাকে, জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট লাগবে।
- ঠিকানার প্রমাণপত্র: আপনি বর্তমানে যেখানে থাকেন, সেটার প্রমাণ হিসেবে যেকোনো একটি বিলের কপি (যেমন: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল বা টেলিফোন বিল) লাগবে। খেয়াল রাখবেন, বিলটা যেন আপনার ঠিকানার হয় এবং গত মাসের বিল হয়।
- বিশেষ ক্ষেত্রে আরও কিছু:
- আপনি যদি বিদেশে যান, তাহলে আপনার ভিসার কপি বা চাকরির অফার লেটার লাগতে পারে।
- বিবাহিত মহিলারা যদি স্বামীর ঠিকানায় আবেদন করেন, তাহলে স্বামীর পাসপোর্ট ও NID-এর কপি দরকার হতে পারে।
টিপস: সব কাগজপত্র সুন্দরভাবে স্ক্যান করে বা ভালো করে ছবি তুলে কম্পিউটারে বা মোবাইলে রেখে দিন। যাতে আপলোড করার সময় সুবিধা হয়।
অনলাইনে কীভাবে আবেদন করবেন?
আবেদন করাটা খুবই সহজ, অনেকটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার মতোই!
- ধাপ ১: ওয়েবসাইটে যান: প্রথমে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেটে গিয়ে এই ওয়েবসাইটে যান: pcc.police.gov.bd
- ধাপ ২: নতুন অ্যাকাউন্ট খুলুন: ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘রেজিস্ট্রেশন’ বাটন খুঁজে বের করে ক্লিক করুন। এখানে আপনার নাম, ইমেইল, মোবাইল নম্বর দিয়ে একটা নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন।
- ধাপ ৩: ইমেইল চেক করুন: অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনার ইমেইলে একটা ‘ভেরিফিকেশন লিংক’ যাবে। সেটার উপর ক্লিক করে আপনার অ্যাকাউন্টটা চালু করে নিন।
- ধাপ ৪: লগইন করুন ও আবেদন শুরু করুন: এবার আপনার ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইটে লগইন করুন। লগইন করার পর ‘নতুন আবেদন’ বাটন দেখবেন, ওটায় ক্লিক করুন।
- ধাপ ৫: ফরম পূরণ করুন: একটা বড় ফরম আসবে। এখানে আপনার সব ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, পাসপোর্টের তথ্য – সবকিছু খুব সাবধানে পূরণ করুন। কোনো ভুল করা যাবে না!
- ধাপ ৬: কাগজপত্র আপলোড করুন: আগেই যে কাগজপত্রগুলো স্ক্যান করে রেখেছিলেন, সেগুলো এক এক করে আপলোড করুন।
- ধাপ ৭: ফি দিন: আবেদনের ফি মাত্র ৫০০ টাকা। এটা আপনি অনলাইনে বিকাশ, রকেট, নগদ বা যেকোনো ব্যাংক কার্ড দিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন। ‘পে অনলাইন’ অপশনে ক্লিক করে পেমেন্ট করে দিন।
- ধাপ ৮: রেফারেন্স নম্বর রাখুন: সফলভাবে আবেদন করার পর আপনি একটি রেফারেন্স নম্বর আর ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন। এটা খুব সাবধানে কোথাও লিখে রাখুন বা স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন। এটা দিয়ে আপনি পরে আপনার আবেদনের কী অবস্থা, তা জানতে পারবেন।
সার্টিফিকেট পেতে কতদিন লাগে আর এর সুবিধা–অসুবিধা কী?
- সময়সীমা: সাধারণত, অনলাইনে আবেদন করার পর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই আপনি সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। যদি আপনার ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে দ্রুতই পাওয়া যায়।
- একটা বাস্তব উদাহরণ: ধরুন, রিমা আপু বিদেশে পড়তে যাবেন বলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন করেছেন। তার সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় তিনি ১২ দিনের মধ্যেই সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে গেলেন। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেল, তার পাসপোর্টে গ্রামের ঠিকানা আর বর্তমান ঠিকানা কিছুটা আলাদা ছিল, তাই পুলিশ ভেরিফিকেশনে একটু বেশি সময় (প্রায় ১৮ দিন) লেগেছে।
সুবিধাগুলো (ভালো দিক) | অসুবিধাগুলো (খারাপ দিক) |
ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করা যায়, সময় বাঁচে। | ইন্টারনেট না থাকলে বা কারিগরি জ্ঞান না থাকলে সমস্যা। |
আবেদনের কী অবস্থা, তা অনলাইনেই জানা যায়। | ডকুমেন্ট স্ক্যানিং ও আপলোডে ভুল হওয়ার সুযোগ থাকে। |
নির্ভুল তথ্য দিলে খুব তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। | পুলিশ ভেরিফিকেশনে দেরি হলে সময় বেশি লাগতে পারে। |
কিছু সাধারণ ভুল যা অনেকে করে থাকেন:
- ভুল তথ্য দেওয়া: পাসপোর্টের সাথে NID বা জন্ম নিবন্ধনের তথ্যে সামান্য ভুল থাকলেও ঝামেলা হতে পারে।
- পুরনো ঠিকানার প্রমাণ: বর্তমান ঠিকানার বদলে অনেক পুরনো বিলের কপি দিয়ে দেন।
- অস্পষ্ট ছবি/স্ক্যান: আপলোড করা কাগজপত্র স্পষ্ট না হলে সমস্যা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কথা: মিথ্যা তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যাবে এবং আপনি বিপদেও পড়তে পারেন। তাই সব তথ্য ১০০% সঠিক দেবেন।
শেষ কথা
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়া এখন আর কঠিন কিছু নয়। সঠিক কাগজপত্র আর অনলাইনে একটু মনোযোগ দিয়ে আবেদন করলেই আপনি দ্রুত আপনার সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। এটা আপনার বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে বা চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করবে।
এখনই আবেদন করতে ক্লিক করুন: pcc.police.gov.bd
যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন!
আমি একটি সরকারি চাকরি করি পাশাপাশি ব্লগিং করি। আমি চাকরি সুবাদে বিভিন্ন জানার চেষ্টা করি তারই পেক্ষিতে এই সাইট টা পরিচালনা করা। তাই এখানের দেওয়া সকল তথ্য বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে লিখি।