এ বছর থেকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেকেই এই প্রক্রিয়ায় ভুল করছেন বা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে এখন আয়কর রিটার্ন দাখিল করা আর আগের মতো কাগজপত্রের ঝক্কি নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) করদাতাদের জন্য অনলাইন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে। তবে প্রক্রিয়াটি বর্তমানে সহজ, দ্রুত ও স্বচ্ছ করেছে।
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তো আসল কথায় আসা যাক।
কেন অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন?
- আইনের বাধ্যবাধকতা: ২০২৫-২৬ করবর্ষ থেকে বেশিরভাগ করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।
- সময় ও খরচ সাশ্রয়: বাড়ি বা অফিস থেকে সহজেই করা যায়, লাইনে দাঁড়াতে হয় না।
- ভুল কম হয়: সিস্টেম অনেক হিসাব নিজে থেকে করে দেয়।
- সুবিধাজনক: রিটার্ন দাখিলের পরপরই অনলাইনে রসিদ (Acknowledgement Receipt) পাওয়া যায়।
রিটার্ন দাখিলের আগে যেসব কাগজপত্র লাগবে
- বেতন থেকে আয়: যদি আপনার চাকরি থেকে আয় থাকে, তাহলে আপনার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি বেতন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন। এতে আপনার মোট বেতন, কেটে নেওয়া টিডিএস (TDS) এবং চালানের তথ্য উল্লেখ থাকবে।
- আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয়: ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ বা অন্য কোনো আর্থিক বিনিয়োগ থেকে আয় থাকলে, সেগুলোর জন্য ব্যাংকের স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
- বিনিয়োগ: যদি আপনার সঞ্চয়পত্র, শেয়ার সার্টিফিকেট বা ডিপিএস (DPS) থাকে, তবে সেগুলোর প্রত্যয়নপত্র বা স্টেটমেন্ট লাগবে।
- পূর্ববর্তী রিটার্ন: আপনার পূর্ববর্তী বছরের দাখিলকৃত রিটার্নের একটি সম্পূর্ণ কপি থাকা আবশ্যক। কারণ, আগের রিটার্নের ক্লোজিং ব্যালেন্স আপনার বর্তমান রিটার্নের ওপেনিং ব্যালেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
একটি এক্সেলে আপনার সমস্ত সম্পদ, দায় এবং বিনিয়োগের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে নিলে রিটার্ন পূরণ করা সহজ হয়। এটি ভবিষ্যতে অডিট বা যাচাইয়ের সময় সহায়ক হবে।
ধাপে ধাপে রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
ধাপ ১: TIN নিশ্চিত করুন
আপনার যদি ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (TIN) না থাকে, আগে NBR ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সহজেই করা যায়।
ধাপ ২: ই-রিটার্ন পোর্টালে লগইন
- ওয়েবসাইট: https://etaxnbr.gov.bd
- TIN ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
- প্রথমবার লগইন করলে মোবাইলে OTP আসবে, সেটি দিয়ে অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে হবে।
ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন
লগইন করলে রিটার্ন ফর্ম আসবে। এখানে যেসব তথ্য দিতে হবে:
- ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা, TIN)
- আসেসমেন্ট বছর (যে বছরের আয় হিসাব দেবেন)
- আয়ের উৎস – বেতন, ব্যবসা, বাড়িভাড়া, সুদ ইত্যাদি
- ছাড় বা রেয়াতের তথ্য – যেমন বিনিয়োগ, সঞ্চয়পত্র, দান ইত্যাদি
ধাপ ৪: তথ্য যাচাই ও জমা
সব তথ্য ভালো করে দেখে নিন। বিশেষ করে গত বছরের ওপেনিং ব্যালেন্স ঠিক আছে কি না। ভুল থাকলে ঠিক করে নিন, তারপর সাবমিট করুন।
ধাপ ৫: রসিদ সংগ্রহ
সাবমিট করার পরই একটি Acknowledgement Receipt ডাউনলোড করতে পারবেন। এটি অবশ্যই সংরক্ষণ করুন, ভবিষ্যতে লাগবে।
জমা দেওয়ার পর যদি ভুল ধরা পড়ে?
চিন্তার কিছু নেই। এখন অনলাইনেই Revised Return দাখিল করা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন—যদি আসল করের পরিমাণ বাড়ে, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত করের সঙ্গে জরিমানাও দিতে হবে।
বিশেষ কিছু তথ্য যা জানা জরুরি
- সময়সীমা: সাধারণত প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ।
- কারা ছাড় পাচ্ছেন: ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, প্রতিবন্ধী ও প্রবাসীরা চাইলে কাগজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
- নথি আপলোড: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু তথ্য দিলেই যথেষ্ট, আলাদা করে সব নথি আপলোড করতে হয় না। তবে NBR চাইলে পরে প্রমাণ চাইতে পারে।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
- সম্পর্কের মধ্যে উপহার: স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান বা ভাই-বোনের মধ্যে দেওয়া উপহার আয় হিসেবে গণ্য হবে না। তবে, উভয়কেই তাদের রিটার্নে এই উপহারের বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
- অসম্পূর্ণ বাড়ি নির্মাণ: যদি কোনো বাড়ি নির্মাণাধীন থাকে এবং সেখানে কিছু খরচ হয়ে থাকে, তবে সেই খরচ ‘অকৃষি সম্পত্তির জন্য প্রদত্ত অগ্রিম’ হিসেবে দেখানো যেতে পারে। বাড়ি সম্পন্ন হওয়ার পর তা সম্পদ হিসেবে দেখানো যাবে।
- অপ্রদর্শিত আয়: যদি কোনো আয় বা সম্পদ রিটার্নে দেখানো না হয়, তবে তা কালো টাকায় পরিণত হবে। পরবর্তীতে এই টাকা ব্যবহার করতে গেলে তা আয় হিসেবে গণ্য হবে এবং উচ্চ হারে কর ও জরিমানা আরোপিত হবে।
শেষ কথাঃ
আয়কর রিটার্ন দাখিল শুধু আইন মানা নয়, এটি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বও বটে। সঠিক তথ্য দিয়ে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে ঝামেলা কমবে, ভবিষ্যতে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না এবং একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।
👉 তাই আর দেরি না করে আজই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করুন, NBR ই-রিটার্ন পোর্টালে লগইন করুন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রিটার্ন জমা দিন।
সঠিকভাবে এবং নির্ভুলভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা আপনার নাগরিক দায়িত্ব। প্রয়োজনে কোনো পরামর্শক বা অডিট ফার্মের সাহায্য নিতে পারেন।
আমি একটি সরকারি চাকরি করি পাশাপাশি ব্লগিং করি। আমি চাকরি সুবাদে বিভিন্ন জানার চেষ্টা করি তারই পেক্ষিতে এই সাইট টা পরিচালনা করা। তাই এখানের দেওয়া সকল তথ্য বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে লিখি।