আপনি যদি বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং আপনার বয়স ১৬ বছরের বেশি হয়ে থাকে তাহলে অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড এর জন্য আবেদন করুন।
একটি দেশের সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সেবা পাওয়ার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের কোন বিকল্প নেই। ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া সরকারি-বেসরকারি চাকরি, ব্যাংক সেবা, পাসপোর্ট ও ভিসা কোনোটিই করতে পারবেন না।
একটা সময় ছিল, যখন ৫ বছরে শুধুমাত্র ২/৩ বার নতুন ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকতো। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে, এখন যেকোনো সময় যেকোন স্থান থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করা যায়।
তবে অনেকেই অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে আজকের পোস্টে।
নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্যতা ও পূর্ব শর্ত
নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশের বাসিন্দা হতে হবে, তার বয়স ১৬ বছর বা তার বেশি হতে হবে এবং পূর্বে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করে নাই এমন ব্যক্তি।
এই তিনটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই আপনি নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে সক্ষম হবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে?
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে আবেদনকারীর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, বাবা-মার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, ইউটিলিটি বিলের কপি, নাগরিক সনদপত্র এবং সচল মোবাইল নাম্বার। নিচে আরো এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখে নিন।
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- বাবা-মায়ের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- স্বামী/স্ত্রীর ভোটার আইডি কার্ড/জন্ম সনদ (শুধুমাত্র বিবাহিতদের ক্ষেত্রে)
- ইউটিলিটি বিল মানে গ্যাস/পানি/বিদ্যুৎ বিলের কপি
- নাগরিক বা চারিত্রিক সনদপত্র
- এর আগে ভোটার হন নি এই মর্মে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র
- রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট
মূলত এই কয়েকটি ডকুমেন্ট হলে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদন করতে উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো অবশ্যই সঠিক থাকতে হবে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ২০২৪
অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। তারপর, আবেদনকারীর নাম, মোবাইল নাম্বার, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, এবং ব্যক্তিগত তথ্য সহ অন্যান্য সকল তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম ফিলাপ করতে হবে।
অতঃপর আবেদন প্রক্রিয়া সঠিক থাকলে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস হতে বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার জন্য ডাকা হবে। তারপর সেখানে গিয়ে ছবি, আঙ্গুলের ছাপ, চোখের আইরিশ ও অন্যান্য তথ্য জমা দিলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম বর্ণনা করা হলো।
ধাপ ১. ভোটার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন/নিবন্ধন
অনলাইনে নতুন ভোটার হতে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। তারপর “আবেদন করুন” অপশনে ক্লিক করুন।
এরপর অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন পেজে ইংরেজিতে আবেদনকারীর পুরো নাম, জন্ম তারিখ-মাস-সাল ফরম্যাটে নির্বাচন করুন। তারপর নিচের ক্যাপচা সঠিকভাবে পূরণ করে “বহাল” অপশনে ক্লিক করুন।
এই পেজে আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার দিয়ে “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করলে উক্ত নাম্বারে একটি কোড আসবে।
“যাচাইকরণ কোডটি দিন” এর ঘরে সেই কোড দিতে হবে। অতঃপর “বহাল” বাটনে ক্লিক করে দিন।
এখন তিনটি ফাঁকা ঘরের মধ্যে ১ম ঘরে ইউজার নেম এবং পরের দুই ঘরে একই পাসওয়ার্ড দিয়ে আবারো “বহাল” অপশনে ক্লিক করুন।
এই ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড অবশ্যই মনে রাখতে হবে। কারণ পরবর্তীতে ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়েই ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে হয়।
ধাপ.২ ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণের নিয়ম
সফলভাবে ভোটার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা শেষ হলে, এই ওয়েবসাইটে Dashboard ওপেন হবে। তারপর এখান থেকে “প্রোফাইল” অপশনে ক্লিক করলে নিচের ছবির মতো ফরম আসবে।
এখানে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, পিতার-মাতার তথ্য, অভিভাবক হিসেবে বড় ভাই/বোনের তথ্য, স্বামী/স্ত্রীর তথ্য (বিবাহিত হলে) , বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে সিলেক্ট করবেন।
অন্যান্য তথ্য পূরণ ফরমে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ধর্ম ও অন্যান্য তথ্য পূরণ করুন। বিশেষ করে ফরমের লাল (*) চিহ্নিত ঘরগুলো বাধ্যতামূলকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর আরো অন্যান্য তথ্য পূরণ করে “পরবর্তী” ক্লিক করুন।
এখন ঠিকানার তথ্য প্রদান করতে হবে। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম/ রাস্তা এবং
বাসা/ হোল্ডিং সিলেক্ট করে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
যেহেতু অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য কোন ডকুমেন্টস আপলোড করতে হয় না। তাই সরাসরি “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করে “পরবর্তী” অপশনে যান।
ভোটার নিবন্ধন ফরম ডাউন*লোড করুন
ভোটার নিবন্ধন ফরমটি যদি সঠিকভাবে ফিলাপ করা হয় ভোটার নিবন্ধন ফরম ডাউন*লোড করার অপশন আসবে। এরপর “ডাউন*লোড” বাটনে ক্লিক করে নিবন্ধন ফরমটি সংগ্রহ করুন।
তারপর যেকোনো একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে উক্ত নিবন্ধন প্রিন্ট করুন । এরপর প্রিন্ট কপি সহ অন্যান্য কাগজপত্র উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিন।
অতঃপর আপনার জমাকৃত সকল তথ্য যদি ঠিক থাকে তাহলে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে ডেকে নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান
অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন যাচাই-বাছাই করার পর, যদি সমস্ত ডকুমেন্ট ঠিকঠাক থাকে তাহলে আপনার মোবাইল নাম্বারে মেসেজ দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে কমিশন অফিসে বায়োমেট্রিক এর জন্য ডাকা হবে।
নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে ছবি, দুই হাতের দশটি আঙ্গুলের ছাপ ও আই স্ক্যান করা হবে।
বায়োমেট্রিক প্রদান করার ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হয়ে যাবে। তবে অনেক সময় সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
তারপর ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হলে নিজেই অনলাইন থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে?
নির্বাচন কমিশন অফিস গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করার ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আপনার ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হয়ে যাবে। আবার কখনো কখনো সর্বোচ্চ ৩০ দিন সময় লাগে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে?
অনেকেই ভাবেন নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে, নিজে নিজে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে ১ টাকাও টাকা লাগে না। তবে কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন করলে তাদের নির্ধারিত ফি দিতে হয়।
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কত বছর লাগে?
নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ১৬ বছর অথবা ১৬ বছরের অধিক হতে হবে।
ছবি তোলার কতদিন পর এনআইডি কার্ড পাওয়া যায়?
সাধারণত ছবি তোলার ১০-১৫ দিন পর অনলাইনে এনআইডি কার্ড পাওয়া যায়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২১-৩০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে অনলাইনে এনআইডি কার্ড পেতে।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক আশা করি, উপরের উল্লেখিত নিয়ম ফলো করে অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ডের আবেদন করতে কোন সমস্যা হলে আমাদের ওয়েবসাইটে কমেন্ট করুন।
এর পাশাপাশি ভোটার আইডি কার্ড সংক্রান্ত সকল ধরনের আপডেট তথ্য পেতে ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
2 thoughts on “অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম”